করোনা মহামারি মোকাবেলায় কৃষক ও কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার আহবান কৃষক সংগ্রাম সমিতির
স্টাফ রিপোর্টার: করোনা মহামারি মোকাবেলায় কৃষক ও কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত প্রদান করে সর্বোচ্চ বরাদ্দ, বন্ধ কৃষি ভিত্তিক শিল্প কলকারখানা চালু, আধুনিকায়ন এবং যান্ত্রিকীকরণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের নামে লুটপাটের পথ বন্ধ করে প্রকৃত কৃষককে ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে প্রদান করার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি। বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির এক যুক্ত বিবৃতিতে এ আহবান জানান। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা ও করোনা মহামারিতে দেশ তথা বিশ্বব্যাপি সৃষ্ট বিপর্যয়কর পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি তথা সামগ্রিক স্বার্থে কৃষি উৎপাদনের সকল উপকরণ (সার-বীজ-ডিজেল-কীটনাশক-বিদ্যুৎ) বিনামূল্যে দিতে হবে। পর্যাপ্ত ধান-চালের গুদাম, সাইলো, হিমাগার, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা সৃষ্টিসহ বন্ধ কৃষি ভিত্তিক শিল্প কলকারখানাগুলি চালু ও আধুনিকায়ন করতে হবে। সকল কৃষি পণ্য ও ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে অধিকাংশ ফসল সরকারকে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ক্রয়ের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ফসলের ন্যায্যমূল্য-এর অর্থ উচ্চমূল্য নয়, কৃষি উৎপাদনের খরচ কমিয়ে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য উৎসমুলে (উৎপাদন প্রক্রিয়ায়) ভর্তুকি দিয়ে কৃষি উপকরণ কৃষকের হাতে পৌঁছাতে হবে যা আমেরিকা-ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশেই চালু রয়েছে। ভাগচাষী-বর্গাচাষীদের জন্য বিশেষ ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। সকল প্রকার কৃষি ঋণ মওকুফ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। প্রকৃত ভূমিহীন-গরীব কৃষিদের মাঝে খাস জমি বন্টন ও রেশনিংয়ের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যান্ত্রিকীকরণ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ভর্তুকির নামে লুটপাট বন্ধ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, জাতীয় ও জনস্বার্থে কৃষির আধুনিকায়ন প্রয়োজন। সামন্ত শোষণের উচ্ছেদ করে গণতান্ত্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাই পারে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। সাম্রাজ্যবাদী নীতি-নির্দেশে ‘এসডিজি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি আধুনিকায়ন মানে কৃষির মুনাফা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া। বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে জাতীয় স্বার্থে। করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলমান- স্বাস্থ্যবিদ, ভাইরাস ও মহামারি বিশেষজ্ঞরা তৃতীয় (সংক্রমণের) ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। পৃথিবীর বহুদেশে চতুর্থ (সংক্রমণ) ঢেউয়ের প্রশ্নও এসেছে। মহামারি মোকাবেলায় পুষ্টি তথা ইমিউনিটি বৃদ্ধি ও টিকাদান কর্মসূচিতে বৈষম্যের কারণে করোনাকাল দীর্ঘ হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় দেশে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনুপস্থিত। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্টের সামাজিক সংক্রামিত হওয়ার এ সময় জেলা পর্যায়ে আইসিইউ ব্যবস্থা না থাকায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার নানা তথ্য-প্রতিবেদন পত্র-পত্রিকায় আসছে। এ সময়ে করোনা সংকটে কৃষিই সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে বলে স্বীকার করে সরকার এ খাতের ওপর ভরসা রাখতে চায় বলছে। কিন্তু বাজেট পর্যালোচনায় আমরা দেখি সাড়ে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার বাজেটে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতের পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ২৯ হাজার ৯৮৩ কোট টাকা। আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ১৫ হাজার ৪৪১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের জন্য মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সব মিলিয়ে মোট বরাদ্দ কিছুটা বাড়বে। অথচ অধিক খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দেওয়ার কথা হচ্ছে। আর কৃষি খাতে ভর্ভুকি গতবারের মতোই ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অথবা ৫০০ কোটি টাকা বাড়াতে পারে বলে জানিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র। জানা যায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৬৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে লুটপাটের স্বার্থে চলতি অর্থবছরে ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যার বড় অংশ অকৃষকদের মধ্যে বন্টিত হয় যার পুরোটাই খরচ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এমতাবস্থায় কৃষক ও কৃষিকে রক্ষায় সর্বোচ্চ বরাদ্দের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি ও লুটপাট ঠেকিয়ে যাতে সরাসরি কৃষক লাভবান হতে পারে সে বিবেচনায় শুধুমাত্র কৃষিখাতের ভর্তুতিতে ন্যূনতম ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি জানান কৃষক নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, করোনায় মানুষকে সুরক্ষা দিতে কৃষি, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেউ কেউ মোট বাজেটের কমপক্ষে ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ বৃহত্তর কৃষি খাতের জন্য বরাদ্দ করা দরকার বলে মত প্রকাশ করেছেন। অথচ সরকার প্রায় ছয় লক্ষ কোটি টাকার বাজেটে মাত্র প্রায় ৫ শতাংশের মত বরাদ্দ দিতে চলেছে যার সিংহভাগ লুটপাট করার প্রস্তাব সামনে আসছে।