আওয়ামী লীগের কোনো রাজনৈতিক অস্তিত্ব নেই। এরা একটি রেজিম তৈরি করেছে-ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি এখন রাজনৈতিভাবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ পরাজিত হয়ে গেছে। আওয়ামী মার্কা কিছু পুলিশ, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা, দুর্নীতিবাজ কিছু ব্যবসায়ি ও দুর্নীতিবাজ কিছু রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগকে চালায় বলেই আওয়ামী ধ্বংস হয়ে গেছে। বিএনপি এখন রাজনৈতিভাবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী দল। আওয়ামী লীগের পরাজয় এখন সুনিশ্চিত।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, মিথ্যা ও গায়েবী মামলায় গ্রেফতার, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ দশ দফা দাবীতে ময়মনসিংহে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার বিকেলে ময়মনসিংহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি আয়োজিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শুরুর আগে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন সহকারে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা জনসভায় যোগদান করেন। এ সময় দশ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। সমাবেশ স্থলের বাইরে মাসকান্দা থেকে চরপাড়ামোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সমাবেশকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের চরম দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। এটা এখন বিশ্বের নানা দেশে আলোচিত হচ্ছে। যে কারণে আইএমএফ এর কাছে যেতে হচ্ছে, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে যেতে হচ্ছে কার কাছে না যাচ্ছে। কার দুয়ারে না হাটছে। দেশের মানুষ এখন দু’বেলা খেতে পারছে না।
একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৬০ শতাংশ লোক পেট ভরে খেতে পারছে না। ৪০ শতাংশ মানুষ একবেলা খাচ্ছেন। ২০ শতাংশ মানুষ ধার করে চলছে। এই হলো বাংলাদেশের চিত্র। গ্যাস ও বিদ্যুতের উচ্চ মূল্য কার পকেটে যাচ্ছে, ব্যাংক লুটপাট করে ব্যাংক খালি করে দিয়েছে। এসব টাকা কার পকেটে যাচ্ছে। সব আওয়ামী সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে।
বিএনপি নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো রাজনৈতিক অস্তিত্ব নেই। এরা একটি রেজিম তৈরি করেছে। বাংলাদেশের জনগণ তাঁর ভোটাধিকার, মানবাধিকার, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে নেমেছে। এ আন্দোলন বিএনপির একার নয়, বাংলাদেশের সকলের এই আন্দোলন। বাংলাদেশের মানুষের এই আন্দোলন এখন আন্তর্জাতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সমস্যা আন্তর্জাতিকীকরণ হয়ে গেছে। সমস্ত বিশ্ব আজকে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশের নিরপেক্ষ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। এ জন্য এ সরকারকে বিদেশী রাষ্ট্রগুলো, মানবাধিকার সংগঠনগুলো জাতিসংঘ বিশ্ব বিবেক এ দেশকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যত জুলুম করবে, বিএনপি তত শক্তিশালী হবে। এখন বাঁধা দিলে ছবি তুলে রাখবেন। আমাদেরকে দিবেন। ফেসবুকে দিবেন। আমি আশাবাদী মানুষ। বর্তমান সরকার আমাদের নেতা-কর্মীদের হামলা, মামলা ও নির্যাতন করছে। ১৭জন নেতাকর্মীকে মেরে ফেলেছে। ৪০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তাঁরা চাকরি হারিয়েছেন, বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন। পুলিশের নির্যাতনে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। তারপরও বিএনপির নেতাকর্মীরা মনোবল হারায়নি। এটি আমাদের আশার বড় কারণ।
বর্তমান সরকার আন্তজার্তিক বিভিন্ন চাপে আছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে। র্যাবের পর উপর নিষেধাজ্ঞার পর এবার ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিশ্বের ১০৭টি দেশের অংশ গ্রহনে বিশ্ব গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কারন বিশ্ব মনে করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। তিন তিনটা স্যাংশনের মাধ্যমে ওদের গালে চপোটাঘাত দিয়েছে। এরপরও তাদের লজ্জা হয়না। এরা এখন নির্লজ্জ হয়ে গেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, পাকিস্তান আমলে শান্তি কমিটি ছিল, এখন শান্তি সমাবেশের নামে শান্তি বাহিনী অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে। এরা হলো পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়া নেতার লোক আর আমাদের লোকজন রনাঙ্গের লোক। ভয়ের কিছু নেই। আওয়ামী লীগের ওরা নিলর্জ্জের দল। বিএনপি আমেরিকার স্যাংশনকে ভয় পায় না, বিএনপি জনগণের স্যাংশনকে ভয় পায়। ক্ষমতায় থাকার জন্য শেখ হাসিনা গুম, খুন ও ভোটাধিকার হরন করেছে। দেশের জনগণ আপনার বিচার চায়। যারা এখনো বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করেন সময় থাকতে সাবধান হয়ে যান, নইলে জনগণের স্যাংশন থেকে রক্ষা পাবেন না। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জেলার বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ কে এম শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মোতাহার হোসেন তালুকদার ও আলমগীর মাহমুদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন ও শরিফুল আলম, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, পাগলা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. মোফাখারুল ইসলাম রানা, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ নূরুল কবীর শাহীন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলী, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু প্রমূখ। এসময় নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডা. আনোয়ারুল হক, সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম হিলালী, বিএনপি অ্যাডভোকেট নূরুল হক, অ্যাডভোকেট এম এ হান্নান খান, এ কে এম মাহবুবুল আলম, শামীম আজাদ, আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, হাফেজ আজিজুল হক, যুবদলের দক্ষিণ জেলা সভাপতি রোকনুজ্জামান সরকার রোকন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট দিদারুল আলম রাজু, মহানগর যুবদলের সভাপতি জোবায়েদ হোসেন শাকিল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছাত্রদলের মাহবুবুর রহমান রানাসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।