আগাম আমন ধান কাটার উৎসব শুরু, লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার: মেহেদী হাসান মঞ্জু এবার এক একর জমিতে আগাম জাতের রোপা আমন ধান চাষ করেছেন। প্রতি শতাংশে ধান হয়েছে চার মণের বেশি। এই ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তিনি। কয়েক মণ ধান বিক্রিও করেছেন। ভালো দাম পাওয়ায় তিনি খুশি।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের রামগোপালপুর গ্রামের কৃষক মঞ্জুর মতো বহু কৃষক স্বল্পমেয়াদি উচ্চ ফলনশীল জাতের আমন ধান চাষ করেছেন। ফলন ও দাম ভালো পেয়ে খুশি অন্য কৃষকরাও। শ্রমিকরাও পাচ্ছেন ন্যায্য মজুরি। তবে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। কারণ, সম্প্রতি বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে রামগোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাকা ধানের সোনালি শিষে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক কাঁচি দিয়ে ধান কাটছেন। আবার যন্ত্রের সাহায্যেও ধান কাটা হচ্ছে। অনেকে জমিতেই পলিথিন বিছিয়ে তার ওপর মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করার কাজ সেরে নিচ্ছেন। নারীরা মাড়াই করা ধান বাতাসে উড়িয়ে পরিষ্কার করাসহ শুকানোর কাজে ব্যস্ত। অনেক জমির ধান আধাপাকা অবস্থায় রয়েছে। এগুলোও কয়েকদিনের মধ্যেই পেকে যাবে।
কৃষকরা জানান, আগাম আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো। এতে খুশি কৃষকরা। শ্রমিকরাও পাচ্ছেন ন্যায্য মজুরি। এই ধান কাটার পরেই একই জমিতে আলু, সরিষা, পিঁয়াজসহ অন্যান্য ফসল ফলিয়েও লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
কৃষক মেহেদী হাসান মঞ্জু জানান, এবার এক একর জমিতে ব্রিধান-৪৯ জাতের আগাম ধান চাষ করে ধান পেয়েছেন ৪৫ মণ। চাষ করে খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। প্রতি মণ ধান ১২০০ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। এরপর একই জমিতে সরিষা চাষ করা হবে।
একই গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, তিন একর জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করেছি। ইতোমধ্যে দুই একর জমির ধান কেটে বাড়িতে নিয়েছি। প্রতি শতাংশে ফলন হয়েছে প্রায় চার মণ। আরও এক একর জমির ধান কয়েকদিনের মধ্যেই পেকে যাবে। আগাম ধান চাষ করে প্রায় সব কৃষকই লাভবান হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী হরিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির ৪০ শতাংশ জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এবার পোকার আক্রমণ ছিল না। তাই খরচও হয়েছে কম। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রমিক নিয়ে ধান কাটাসহ মাড়াইয়ের কাজ করছি। এরপর একই জমিতে আলু চাষ করা হবে।
ধান কাটার শ্রমিক জয়নাল, আজিজ, কালাম, মঈদুল নামের কয়েকজন জানান, অল্প সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় কৃষকরা আগাম জাতের ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে কৃষকদের পাশাপাশি শ্রমিকরাও ব্যস্ত সময় পাড় করছে। তারা দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে করছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এই বিভাগে চলতি মৌসুমে ৬ লাখ ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। সম্প্রতি বন্যায় অনেক কৃষকের জমির ধান নষ্ট হয়েছে। বন্যার ফলে ৭৫ হাজার ৪২৯ হেক্টর জমিতে চাষ করা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমে শুধুমাত্র ময়মনসিংহ জেলায় ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ২৬ হাজার ৯০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক সালমা আক্তার বলেন, সম্প্রতি অক্টোবরে পাহাড়ি ঢল এবং অতিবৃষ্টিজনিত কারণে বন্যায় অনেক কৃষকের চাষ করা রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমন নষ্ট হওয়া জমিগুলো ছাড়া অন্য সব জমিতে ফলন ভালো হওয়ায় আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তার খুব কাছাকাছি আমরা অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি। এ অঞ্চলে খাদ্যের জন্য কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।