কৃষি ও শিল্পজাতীয়

কিশোরগঞ্জের মহিনন্দের কৃষক পার্টনার স্কুলের সমাপনী ও সনদ বিতরণ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : টেকসই, পুষ্টিকর নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও উদ্যোক্তাদের মান উন্নয়নে কিশোরগঞ্জের মহিনন্দে প্রতিষ্ঠিত কৃষি বিভাগের পার্টনার স্কুলের সমাপনী ও সনদ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের গোয়ালাপাড়ায় অবস্থিত মহিনন্দ ইতিহাস ইতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের আঙিনায় পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্রের সমাপনী ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর ) দুপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ সদরের আয়োজনে পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্র সমাপনী ক্লাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার পরে বিজয়ীদের মধ্যে সনদ প্রদান করা হয়। পার্টনার ফিল্ড স্কুল ও কৃষক সেবা কেন্দ্র এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. এমাজ উদ্দিন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রতি শুরু হওয়া প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রোগ্রামের আওতায় পার্টনার ফিল্ড স্কুলে ২৫ জন কৃষক-কৃষাণীকে নিয়ে পরিচালিত হয় তিনমাসের এ স্কুল। উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আমনের আধুনিক ধান উৎপাদন কলাকৌশলের ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ওই স্কুলে। সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো:নাছিরুজ্জামান সুমন,মোছা: সাবিহা সুলতানা, মেহেদী হাসান,মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ ও পাঠাগারের সভাপতি আমিনুল হক সাদী, ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিনসহ স্থানীয় কৃষকরা।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, অগ্রহায়ণের ধান কর্তনের পূর্ব পর্যন্ত ১০টি সেশনে এই স্কুল চালু ছিলো, ধান কর্তন ও মাড়াইয়ের মাধ্যমে আজ তার সমাপনী হয়েছে। উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আধুনিক ধান উৎপাদন কলাকৌশল, পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ, পুষ্টি উন্নয়ন, উদোক্তা তৈরির ওপর হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় ওই স্কুলে।

কৃষকরা জানান, এই স্কুলে পড়ে তারা অনেক কিছুই শিখতে পেরেছেন। বিশেষ করে জমিতে ধানের আবাদ ও সঠিক মাত্রায় সার কীটনাশক ব্যবহার, পোকা দমনসহ নানা বিষয়ে এই স্কুলে পড়ে তারা অনেক কিছুই শিখতে পেরেছেন।

স্কুলের স্থানদাতা মহিনন্দ ইতিহাস ইতিহ্য সংরক্ষণ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা আমিনুল হক সাদী বলেন, পাঠাগারের আঙিনায় উন্মুক্ত স্থানে বসে ক্লাস করেছেন মহিনন্দ ৩ নং ওয়ার্ডের একদল কৃষক। নিমগ্ন হয়ে শুনেছেন কৃষি বিভাগের দক্ষ প্রশিক্ষক ও শিক্ষকের কথা। নানা বয়সের এসব নারী-পুরুষ কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সবাই এখানে ‘স্কুলছাত্র’ তবে এটি গতানুগতিক কোনো স্কুল নয়। মুক্ত এলাকায় চেয়ার-টেবিল ছাড়া এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শেখানো হয় ধান কীভাবে চাষাবাদ করা হয়, সহজে বাড়ির আঙিনায় নানা জাতের সবজি চাষ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটানো যায়। কৃষিকাজের নানা তথ্য ও কৌশল শিখেছেন প্রশিক্ষিত ২৫ জন কৃষক কৃষাণী।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছিরুজ্জামান সুমন,মেহেদী হাসান ও সাবিহা সুলতানা বলেন, পার্টনার স্কুলে পড়ে কৃষকরা ধান আবাদে সক্রিয়, কৃষি ও পারিবারিক পুষ্টি বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে নারীরা সন্তান লালন পালন ও পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছেন। কৃষকরা মাঠে ফসলের পরিচর্যা করে খাদ্য উৎপাদনে বিরাট ভূমিকা রাখছেন।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. এমাজ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফর্মেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রিসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ- পার্টনার প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় চার এলাকায় পরিচালিত হচ্ছে ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল’। এর মধ্যে আজ মহিনন্দ ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ ও পাঠাগারের আংগিনায় স্থাপিত স্কুলের সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সনদ ও সম্মানিত করা হয়েছে। আমরা ক্লাসের সমাপনী করলেও শিক্ষার্থীরা একে একটি সংগঠনে রুপায়ন করে তাদের বিভিন্ন চাহিদা মিটাতে সহায়ক হবে প্রতিষ্ঠানটি।