জাতীয়রাজনীতি

নান্দাইলে নরসুন্দা নদীর পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে রমরমা পাথর ব্যবসা

নান্দাইল প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে নরসুন্দা নদী। আর সেই নদীপথকে কাজে লাগিয়ে ইৎারাবিহীন শত শত কোটি কোটি টাকার পাথর আমদানী-রপ্তানীর ব্যবসা করছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এতে করে নান্দাইল উপজেলায় বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়লেও সরকার যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, ঠিক তেমনি নরসুন্দা নদীর পানির প্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় উপজেলার কৃষকদের কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। নদীর জায়গা অর্থাৎ পানির প্রবাহের পথ দখল করে পাথরের বিশাল বিশাল স্তুপ সৃষ্টির মাধ্যমে পানির প্রবাহের গতি হ্রাস করছে। ফলে নদীর নব্যতা হ্রাসের পাশাপাশি যেকোন সময় অল্প বৃষ্টিতেই প্লাবিত হয় উত্তরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকা। এছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ক্র্যাসিং করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সড়ক ও জনপথের জায়গা এবং নদীর জায়গা দখল করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা পাথর ব্যবসা। সেই পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে নরসুন্দা নদীর জমি (চর) দখল ও পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সহ পরিবেশ দুষণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা সিলেট, সুনামগঞ্জ ও ছাতক সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌকা দিয়ে নদীপথে লাখ লাখ ঘনফুট বড় বড় পাথর মুশুলী ইউনিয়নের তারেরঘাট বাজারে নিয়ে আসেন। সেই পাথর নরসুন্দা নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা হয়। পরে তা ক্র্যাশিং মেশিনের মাধ্যমে ভাঙানো হয় এবং তা সারাবছর ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। ফলে পাথর ব্যবসায়ীরা নরসুন্দা নদীতে পাথর রেখে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি ও অবৈধ ক্রাসিং মেশিন ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছে। এতে নদীর জায়গা ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়ে যাওয়ায় সংকোচন হয়ে যাচ্ছে নদীর প্রস্থতা। ব্যবসায়ীরা জানায়, যেখানে তারা পাথর রাখছেন, সেটি নদীর ভিতরের অংশ মানে নদীর গতিপথ। অনেকেই ব্যক্তিগত জমি ভাড়া নিয়ে পাথর রাখেন। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরে কোন ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ভাঙ্গার মেশিনের (ক্যাশিং মেশিন) দেদারসে ব্যবহার চলছে। ফলে যেমন পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, তেমনি শব্দ দূষণসহ পাথর ভাঙ্গার অদৃশ্য বালুকণা আশেপাশের পথচারীদের চোখে পড়ায় চোখের ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি পাথরবহনকারী ছোট-বড় প্রতিটি নৌকা থেকে ৪০০ টাকা হতে ৮০০ টাকা পর্যন্ত চাদাঁ তুলা হয়, যা ব্যবসায়ী সমিতি নিয়ে যায়। তবে বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী জানান, উক্ত তারেরঘাট বাজার পাথর ব্যবসার সমৃদ্ধি লাভের জন্য সরকারি ইজারা ডাকের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এখানে কাহারও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমতি নেই। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে পাথর ব্যবসা। পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বাচ্চু নদীতে পাথরের স্তুপ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এসিল্যান্ড এসে তিনদিনের সময় দিয়ে গেছে, তবে তিনদিন কেন ? তিনমাসেও সরানো সম্ভব নয়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেকার উদ্দিন ভূইয়া বিপ্লব বলেন, সরকারি ইজারা ডাক নেই। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। আমার জানামতে অনেকেরই ইনকাম টেস্কের ফাইলও আছে। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই বলে স্বীকার করেন। কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিল মাহমুদ ফয়সাল জানান, তিনি এখানে নতুন এসেছেন। বিষয়টি দেখার তিনি একজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, নদীতে পাথর রাখার জন্য পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘœ হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সেটা করতে পারেন না। পাথর ভাঙার জন্য যে ক্র্যাসার মেশিন ব্যবহার করছে তা ব্যবহার করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। ওই বাজার এলাকায় নরসুন্দা নদীর প্রস্থতা কতখানি তা সার্ভেয়ারকে দিয়ে জরিপ করে দেখা হবে