ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন করার দাবি
শহর প্রতিনিধি ঃ ময়মনসিংহে প্রায় ২৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ের ব্রহ্মপুত্র নদের খনন প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় নি বলে দাবি করেছে ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন সংগঠনটি। আজ ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে সংগঠনটির কর্মীবৃন্দ তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে তুলে ধরে বলেন, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের বসবাস। ব্রহ্মপুত্র বিপণ্ন হওয়ায় গভীর সংকটে পতিত হয়েছে এই অববাহিকায় মানুষের জীবনজীবিকা, কৃষি, মৎস, পশুপাখি তথা সমগ্র প্রাণপ্রকৃতি। সেই প্রেক্ষিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র খনন প্রকল্পটি মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু, খনন শুরুর পরে প্রায় তিন বছরের মাথায় মানুষের মনে হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। কারণ, ২৭৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ের খনন প্রকল্প ইতিবাচক ফলাফলের বদলে নেতিবাচক ফল নিয়ে হাজির হয়েছে। যেমন:
১) ব্রহ্মপুত্রের একাধিক ধারা বালু দিয়র ভরাট করা হয়েছে। তবে কি প্রকল্পটি নদী ভরাটের? -এটি প্রকৃতি বিরোধী কাজ, নদী হত্যার নামান্তর।
২) ব্রহ্মপুত্রের প্রস্থ ৯০ মিটার বা কোথাও কোথাও ৬০/৭০ মিটারে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। সরু খালে পরিণত করা হচ্ছে। অথচ, নদীটি বাস্তবিক এক/দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত।
৩) খননের বালু নদীর বুকে জমা করার কারণে নদীর দুই তীরেই ব্যাপকভাবে দখল করে ঘরবসতি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে। এতে নদীটি চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
৪) যেখানেই খনন করা হয়েছে, সেখানেই চর জেগেছে।
৫) কয়েক জায়গায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে বা হচ্ছে।
৬) বালু ব্যবস্থাপনায় গুরুতর ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
৭) সর্বোপরি, নদী খননের সুবিধা পাচ্ছে খননকাজে যুক্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বালু ব্যবসায়ী ও দখলদারগণ। নদীর হারাচ্ছে তার জায়গা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণপ্রকৃতি।
এমতাবস্থায়, বিআইডব্লিউটিএ বলছে কিশোরগঞ্জের টোক থেকে ময়মনসিংহ সদর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৬%! যা অবিশ্বাস্য এবং পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি করে।
প্রকল্পটি সমাপ্তির তারিখ ৩০ জুন ২০২৪। অর্থাৎ, হাতে সময় আছে আড়াই বছর। ঘোষণা অনুযায়ী প্রথম দুই বছর খনন এবং শেষ তিন বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে নির্ধারিত। বাস্তবে, এখনও বেশিরভাগ অংশে খনন শুরু হয়নি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে প্রকল্পটি দীর্ঘায়িত করে ব্যয় বৃদ্ধির পাঁয়তারা চলছে। কাজেই, আমরা কোনভাবে আশ্বস্ত হতে পারছি না। এবং আমরা মনে করি-
১) পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি পুনর্মূল্যায়ন করে বিজ্ঞানসম্মত হোক।
২) প্রকল্পটিকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হোক যেন নদীটি প্রাণ ফিরে প্রায়। কোনও ধারা যেন বন্ধ না হয়।
৩) দখল উচ্ছেদ করা হোক। দূষণ বন্ধ হোক।
৪) চীন ও ইন্ডিয়া যেন ব্রহ্মপুত্রের উজানে বাঁধ তৈরি করতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক জনমত তৈরির চেষ্টা করা হোক। এবং
৫) নদী তথা পৃথিবীর শত্রু প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হোক। সবধরন দূষণ থেকে নদীকে রক্ষা করা হোক।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন এর সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ।
উপস্থিত ছিলেন গবেষক স্বপন ধর, কবি শামসুল ফয়েজ, তিস্তা রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ফরিদুল ইসলাম, চিত্রশিল্পী হোসাইন ফারুক প্রমুখ।