জাতীয়রাজনীতি

রাষ্ট্রপতির সংলাপে থাকা না থাকার তফাত কী?

ডয়চেভেলে প্রতিবেদন:   রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জনকে আওয়ামীলীগ পাত্তা না দিলেও বিএনপি মনে করে এতে রাষ্ট্রপতির কাঁধে বন্দুক রেখে স্বার্থ হাসিলের পথ বাধাগ্রস্ত হবে৷ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো চায় নির্বাচন কমিশন আইন৷

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন সদিচ্ছা না থাকলে কিছুতেই কোনো লাভ নেই৷

রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপেও এরইমধ্যে জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন আইনের দাবি করেছেন৷ তারা মনে করেন “সময় নেই” এটা কোনো কথা নয়, বাংলাদেশে একদিনেও আইন করা নজির আছে৷ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “সদিচ্ছা থাকলে এখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমেও জারি করতে পারেন৷ পরে সংসদে পাস হবে৷ কিন্তু এখন যে নির্বাচন কমিশন তা সার্চ কমিটি বা যেভাবেই গঠন করা হোক না কেন কোনোভবেই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷”

এর জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিদেশি সংবাদমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, “সরকার সংবিধান অনুয়ায়ী নির্বাচন কমিশন আইন করতে চায়৷ কিন্তু যারা বলছেন একদিনে বা এক রাতেও আইনটি করা সম্ভব তারা ঠিক বলছেন না৷ কারণ এই আইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই সবদিক দেখে, যাচাই বাছাই করে আইনটি করতে হবে৷ তাড়াহুড়ো করে এই আইনটি করা ঠিক হবে না৷ এটা ড্রাফট হওয়ার পর সংসদে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন৷ কিন্তু এই কমিশনের মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে৷ তাই এত অল্প সময়ের মধ্যে এটা করা সম্ভব হবে না৷”

তার মতে, ‘‘রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করছেন সেখানে সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি নির্বাচন কমিশন হবে ৷ সবার উচিত রাষ্ট্রপতির ওপর আস্থা রাখা৷”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার বলেছেন,”সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি যে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে যাচ্ছেন এটা সংবিধানের বাইরে কিছু নয়৷ বিএনপির কাজ হচ্ছে জল ঘোলা করা৷ তারা জানে নির্বাচনে তারা জিততে পারবে না৷ তাই তারা নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে৷”

বিএনপি বর্জন করায় সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন কমিশন গঠন গুরুত্ব হারাবে কী না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন,”বিএনপিকে তো এখনো রাষ্ট্রপতি সংলাপের আমন্ত্রণই জানাননি৷ তার আগেই তারা কী কথা বলছেন তার ওপর মন্তব্য করাকে আমি সমীচীন মনে করি না৷ রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ পাওয়ার পর তারা কি সিদ্ধান্ত নেন তা দেখে মন্তব্য করতে হবে৷ তবে আমরা এখনো আশা করি বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাবে৷”
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,”বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপে যাবে কী না এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়৷ তবে আমার মতামত হলো বিএনপির সংলাপে যাওয়া উচিত৷”
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,” বর্তমান ব্যবস্থায় প্রচলিত নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষ হোক না কেন তাদের পক্ষে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়৷ কারণ প্রশাসন তাদের কথা না শুনলে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না৷ তাই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দিয়ে আইন করতে হবে৷”

বিএনপির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,”রাষ্ট্রপতির ঘাড়ে বন্দুক রেখে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়৷ আমরা সেটা হতে দিতে পারি না৷ তাই আমরা সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ এর আগেও দুইবার সংলাপ হয়েছে৷ আমরা গিয়েছি কিন্তু ফলাফল শূন্য৷ এই সংলাপের মাধ্যমে সার্চ কমিটি নাটক করে যে কমিশন হবে তা সরকারের পছন্দেরই হবে৷ আর আমরা মনে করি আগে নির্বাচনকালীন সরকার কী হবে তা ঠিক করতে হবে৷ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি যাবে না৷ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো ধরনের নির্বাচন কমিশনই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না৷”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,”রাষ্ট্রপতি নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংলাপ ডাকলে সেখানে আমরা যেতে পারতাম৷ কিন্তু এজেন্ডায়ও তো সেটা নেই৷ এজেন্ডাবিহীন আলোচনা করে কোনো ফল হয় না৷”
আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন,”আমরা কোনো অবৈধ বিষয়কে বৈধতা দিতে চাই না৷ সেই কারণেই সংলাপে যাচ্ছি না৷ আগে আমরা দেখেছি এই প্রক্রিয়ায় কমিশন গঠন করে দিনের ভোট রাতে করা হয়েছে৷ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে৷ তাই নতুন করে সেই অবৈধ ব্যবস্থা আসুক তা আমরা চাই না৷ তাই আমরা বলছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থাই সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে না৷”
রাষ্ট্রপতির এই সংলাপকে লোক দেখানো সংলাপ ছাড়া আর বেশি কিছু মনে করেন না সুশাসনের জন্য নাগরিকের(সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার৷ তিনি বলেন, বিএনপি সংলাপে না গেলেও সরকারের কোনো সমস্যা নেই৷ তারা তাদের মত কমিশন গঠন করবে৷ তার কথা,”সংবিধানের ৪৮(ত)  অনুযায়ী  রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে৷ তিনি যেভাবে বলবেন সেভাবে৷ ফলে সংলাপ করে লাভ কী? কমিশন তো হবে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায়৷”
তিনি বলেন,”আমরা যে নির্বাচন কমিশন আইনের কথা বলছি সেটা করা এখনো সম্ভব৷ আইন হলে কিছুটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশা ছিল৷ কিছু বাধ্যবাধকতা থাকত৷ কিন্তু সদিচ্ছা না থাকলে কিছুতেই কিছু হবে না৷”

0 seconds of 0 secondsVolume 90%

One thought on “রাষ্ট্রপতির সংলাপে থাকা না থাকার তফাত কী?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *