জাতীয়রাজনীতি

লগ্নিপুঁজি ও দেশীয় দালাল পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটছে কৃষি খাতে: অস্তিত্ব সংকটে কৃষক সমাজ

সুদীপ্ত শাহিন:   সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজির স্বার্থে আনীত ভারতে কৃষি বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে সেদেশের ভুক্তভোগী কৃষক সমাজ। তার ঢেউ এসে পড়ছে বাংলাদেশেও। কেননা ভারত ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। দুইটাই নয়া-ঔপনিবেশিক আধা-সামন্ততান্ত্রিক দেশ। কৃষিতে সামন্তীয় শোষণের অবশেষ এখানে রয়ে যাওয়াসহ শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যমান রয়েছে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজির শোষণ।  সস্তা শ্রম ও কাঁচামালের যোগান হিসেবে এইসব দেশকে লগ্নি পুঁজি বিনিয়োগের বাজার হিসেবে বেছে নেয় সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া লগ্নিকারী গোষ্ঠী। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতি মহামন্দার দ্বারগোড়ায় রয়েছে। ফলে সংকুচিত হয়ে আসছে বিশ্ব অর্থনীতি। তার সাথে করোনা মহামারীর প্রভাব যুক্ত হয়ে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে ও সংকুচিত হচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশেও কমে আসছে বিদেশী বিনিয়োগ । বাংলাদেশে সরকারি আয়ের প্রধান উৎস হলো কর রাজস্ব বাবদ সংগৃহীত অর্থ। মূলত প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ কর এই দুই ধরনের করের সমন্বয়ে কর রাজস্ব গঠিত এবং এ খাত থেকে সরকারের মোট আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি সংগৃহীত হয়। রাজস্ব নীতিতে মূলত সংগৃহীত সম্পদের সাথে খরচের সামঞ্জস্য বিধান করতে অর্থনীতিতে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে এবং কর্মসংস্থানমুখী প্রণোদনা সৃষ্টির নামে অবাধ লুটপাট ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। বিনিয়োগ বলতে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজি এবং এদেশীয় দালাল পুঁজির বিনিয়োগ। সাম্রাজ্যবাদের এদেশের  দালাল সরকারগুলো একচেটিয়া পুঁজির নির্মম শোষণের লক্ষ্যে এসব বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে সবসময় তৎপর থেকেছে। কর মওকুফের সুবিধা, শুল্ক হ্রাসের সুবিধা,  ত্বরাণ্বিত অবমূল্যায়ন(Accelerate Depreciation) সুবিধা, শিল্প আমদানি অনুমতিপত্র (IRC), বন্ডেড ওয়্যার হাউস (Bonded Warehous) সুবিধা,  রপ্তানির জন্য আর্থিক সুবিধা, বিদেশী বিনিয়োগের লভ্যাংশ, কারিগরি ফি ইত্যাদির অর্থ বিদেশে পাঠানো (Remittance) এর সুবিধা, বিদেশী বিনিয়োগ সম্পূর্ণ প্রত্যার্পণ (Repatriation) এর সুবিধা, বিনিয়োগকারী/বিশেষজ্ঞদের জন্য ভিসা/কাজের অনুমতিপত্র ইত্যাদি বিভিন্নরকম সুবিধা প্রদান করে থাকে সরকারগুলো।

বিদেশি বিনিয়োগের একটি বড় অংশ নিয়োজিত হয় তৈরি পোশাক খাতে। শতকরা একশ ভাগ বিদেশি মালিকানার বা যৌথ উদ্যোগের কারখানাসমূহে তা বিনিয়োগ হয়। কারখানার সংখ্যা বিচারে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে তৈরি পোশাক এগিয়ে থাকলেও আসলে মূলধনের পরিমাণের বিচারে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি ঘটে ভোগ্যপণ্য উৎপাদন খাতে। বিদেশি বিনিয়োগের আদিতম খাত হচ্ছে চা বাগান। বর্তমানে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের নাম কাফকো। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগসহ প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ২২টি, যেগুলির বেশির ভাগ ছিল ঔষধ ও বৈদ্যুতিক পণ্যাদির কারখানা। বাংলাদেশ হওয়ার পর সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের প্রভাবে মুজিব সরকার দেশের মাঝারি ও বৃহৎ সকল শিল্পকারখানা জাতীয়করণের নীতি গ্রহণ করে। ফলে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে নতুন বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ঘটে নি। পরবর্তীকালে এদেশে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল থাকায় ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের প্রবাহ নিতান্ত সীমিত থেকে যায়। ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হয় মাত্র ২২০টি প্রতিষ্ঠান। তবে এর পর থেকেই বিদেশি বিনিয়োগসহ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন দ্রুত বাড়তে থাকে। জুলাই ১৯৯৬ থেকে মে ১৯৯৯ সময়ে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয় ৪২৫টি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাক্কলিত বিনিয়োগের পরিমাণ ২৮৮.৮ বিলিয়ন টাকা । বর্তমানে যেসব খাতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বেশি ঘটছে সেগুলির মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, বস্ত্রশিল্প, রসায়ন, কাগজ, যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ, মুদ্রণ, প্যাকেজিং, প্লাস্টিক সামগ্রী, ধাতব সামগ্রী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বৈদ্যুতিক দ্রব্যাদি, ঔষধ শিল্প ইত্যাদি। অতি সম্প্রতি তেল ও গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, সিমেন্ট, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ইত্যাদি খাতে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বিশেষভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে। এখন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে উচ্চ প্রযুক্তির এবং মূলধন নিবিড় প্রকল্পসমূহে, বণ্টিত হচ্ছে প্রচলিত নানা খাত ও উপখাত এবং নতুন নতুন খাতের শিল্পসমূহে। ৭১’এর পূর্বে  বিদেশি বিনিয়োগের প্রধান উৎস ছিল যুক্তরাজ্য, উত্তর আমেরিকা ও জাপানের মতো মাত্র কয়েকটি উন্নত অর্থনীতির দেশ। ১৯৭০ দশকের শেষদিকে এদের সঙ্গে সংযুক্ত হয় হংকং, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভারত। বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগে চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসে ১৯৯০-এর দশকে। তবে বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগে এখনও শিল্পোন্নত দেশগুলি প্রাধান্য বিস্তার করে আছে এবং তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি হচ্ছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি এবং কানাডা। বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ঘটে মূলত বাইরে থেকে আসা নগদ মূলধন, মূলধনি সামগ্রী তথা আমদানিকৃত যন্ত্রসরঞ্জাম এবং পুনর্বিনিয়োগকৃত মুনাফা- এই তিন ধরনের।

২০০৮ সাল থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে চলমান মন্দার প্রভাবে বাজার-প্রভাব-বলয় দ্বন্দ্বে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ, মুদ্রা যুদ্ধ চলমান। বাংলাদেশ এই দুই দেশের উপরই নির্ভরশীল রয়েছে। তাদের বিনিয়োগের জন্য সরকার লক্ষ লক্ষ একরের কৃষি জমি অধিগ্রহণ করে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে। বিনিয়োগ বাধা দূর করতে বৈদেশিক মুদ্রানীতি আইন-১৯৪৭ কে সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। তারপরও বিশ্ব মন্দার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি সংকুচিত থাকায় বিদেশী বিনিয়োগের হার তুলনামূলক কম। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) প্রাক্কলন অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত বছরের প্রথমার্ধে এফডিআই ১৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার, ২০১৯ সালের প্রথমার্ধে যা ছিল ১৪৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। দেশে গ্রীণফিল্ড বিনিয়োগও কমেছে। বহুজাতিক কোম্পানি যখন অন্য কোনো দেশে একদম নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য বিনিয়োগ করে, তখন তাকে বলে গ্রিনফিল্ড।  এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা বিনিয়োগ আকর্ষণে মরিয়া চেষ্ঠা চালানোসহ প্রকাশ্যে মার্কিন বিনিয়োগের আহবানও জানান। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দায় টিকে থাকার হাতিয়ার হিসেবে কৃষিতে বিনিয়োগের বিশেষ নজর দিচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুজি ও দেশীয় দালাল পুঁজিপতি গোষ্ঠী। কৃষি গবেষণা প্রশিক্ষণে কারিগরি সহায়তাসহ বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে কানাডা। এ ছাড়া শস্যের বৈচিত্র্যায়ন ও নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায় দেশটি। দেশের জিডিপির ১৩% এর অধিক আসে কৃষি থেকে। আমাদের দেশে দেহের ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি পূরনে প্রতিজন লোকের ৩০০ গ্রাম সবজি প্রতিদিন  খাওয়া প্রয়োজন । কিন্তু সেই জায়গায় মোট সব্জি উৎপাদনের গড় হিসেবে জনপ্রতি পড়ে ১৬৬ গ্রাম। গ্রীষ্মকালীন শাক সবজির চাহিদা ১২৪ লাখ মেট্রিক টন ।কিন্তু উৎপাদন হয় মাত্র ৫৫.২০ লাখ মেট্রিক টন, যা মোট উৎপাদনের মাত্র ৩০%, যার ফলে গ্রীষ্মকালে সবজির দাম  অতিরিক্ত বেড়ে যায়। গ্রীষ্মকালীন শক সবজি উৎপাদনে রয়েছে অতি বৃষ্টি, অতি খরা কিংবা রোগব্যাধির মতো নানা চ্যালেঞ্জ। ফলে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক । বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে চাষীদের মধ্যে কম উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়, যা দেশের শীতকালীন শাক সবজি চাষের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে না। এই সুযোগ গ্রহণ করছে দেশীয় দালাল পুঁজিপতিরা। সম্প্রতি ‘scope & Challenges of summer vegetable production’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল ওয়েবিনারের মাধ্যমে এসিআই ক্রপ কেয়ার সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর , কৃষি শিক্ষা  প্রতিষ্ঠান সমূহ ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সাথে সমন্বয় সাধন করে দেশের গ্রীষ্মকালীন সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চায় বলে জানায়।

লগ্নি পুঁজির স্বার্থে  কৃষিতে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সরকার ইতিমধ্যে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভর্তুকি দিয়ে ৫১ হাজার ৩০০টি যন্ত্র কৃষকদের সরবরাহ করছে সরকার। এইসব যন্ত্রের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের মতো কম সময়ে জমি চাষ এবং ফসল সংগ্রহ করতে পারবেন কৃষক। এরই ধারাবাহিকতায় ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ শীর্ষক একটি নতুন প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই)। এটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে কৃষিকে ব্যবসায়িকভাবে অধিক লাভজনক ও বাণিজ্যিকভাবে টেকসই করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। চাষাবাদে ৫০ শতাংশ সময় এবং ২০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় করা যাবে। কৃষিতে বিনিয়োগকারীদের অধিকতর লাভজনক করার লক্ষ্যে সরকার গত অর্থবছরে ২০০ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এটি কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবেও বিশ্বখ্যাত। এদেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ এবং শ্রমশক্তি ৬০ ভাগ কৃষি কাজে নিয়োজিত। তাই সস্তা শ্রম ও বিনিয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে  কৃষিতে বিনিয়োগের প্রেক্ষিতে প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা এক সাক্ষাতকারে বলেন-  ‘মোট জাতীয় উৎপাদনে একক বৃহত্তম খাত হিসেবে কৃষিই সর্বাধিক অবদান রাখছে। শস্য উৎপাদন পদ্ধতি ব্যাপকভাবে শ্রমঘন এবং কৃষি খাতে বিদ্যমান উদ্বৃত্ত শ্রমশক্তি, দক্ষ ও অদক্ষ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান কৃষি খাতই বৃহত্তম উৎস, বছরব্যাপী বিদ্যমান অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ, জৈব বৈচিত্র্যের ব্যাপক সমাহার, বিভিন্ন প্রজাতির শস্য এবং কৃষিজ উৎপন্ন হলো আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের প্রধান উৎস এবং সর্বোপরি কৃষিজাত উৎপন্নের ক্ষেত্রে অন্যান্য উৎপাদনের চেয়ে অধিকতর মূল্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে।’

কৃষিকে আধুনিকায়ন ও লাভকরণের নামে দেশী-বিদেশী পুঁজির বিনিয়োগ ঘটায় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে কৃষক সমাজ। এদেশের কৃষি উৎপাদন ও বণ্টন এখনো ব্যক্তিগত। কিন্তু দেশী-বিদেশী পুঁজির মালিকরা তাদের মুনাফার স্বার্থে এইক্ষেত্রে হয়তো সামাজিক উৎপাদন চালু করতে পারে।  এতে ছোট, মাঝারী এমনকি ধনী কৃষকরা জমি হারানোর শংকায় থাকবে। কারণ  বৃহৎ পুঁজির আধুনিক উৎপাদনের সাথে কৃষকদের ছোট পুরনো উৎপাদন পদ্ধতি কোনভাবেই টিকতে পারবে না।  অন্যদিকে যারা টিকে থাকবে তাদের কাছেও  বিক্রি করবে তাদের আধুনিক কৃষি যন্ত্রাংশ । ফলে কৃষির পুরো নিয়ন্ত্রণই সাম্রাজ্যবাদী লগ্নি পুঁজি ও দালাল পুঁজির খপ্পরে  চলে যাওয়ার শংকা রয়েছে। এতে  বিপন্ন হয়ে যেতে পারে কৃষক সমাজ। বাড়তে থাকবে ভূমিহীন, গরীব ও সর্বহারা মানুষের সংখ্যা। যারা মজুর হিসেবে আবার পুজিপতিগোষ্ঠীর কৃষি খামারে শ্রম দিতে বাধ্য থাকবে। এমনাবস্থায় এদেশের কৃষক সমাজকে এখনি সচেতন ও সংগঠিত হয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে না তুললে এক ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। তবে এই আন্দোলন শুধু কৃষকদের একার নয়। এখন যেসব মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা  কৃষি পণ্য সিন্ডিকেট করে একদিকে কৃষকদের ঠকায় অন্যদিকে শহরের ভোক্তাদের ঠকায় তারাও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। কেননা একচেটিয়া লগ্নিকারী গোষ্ঠী মধ্যস্বত্ত্বসহ সামগ্রিক সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দেশে কৃষি উৎপাদিত খাদ্য সামগ্রির দাম কোথায় গিয়ে ঠিকবে তা এই মূহুর্তে অনুমান করা যায় না। সে জন্য কৃষকদের আজকের সমস্যা শুধু কৃষকদের একার নয়। একইধারে এটা জাতীয় সমস্যা এবং কৃষি থেকে সামন্তীয় ব্যবস্থা উচ্ছেদের প্রশ্নের সাথে জড়িত ।

 

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *