শিকলে বন্দী জীবন, টাকার অভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা
আলএমরান ঃ তিন বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধ তোতা মিয়া। এর পর থেকে পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় দিনের বেলায় গাছের সাথে শেকল বাধা অবস্থায় এবং রাতের বেলায় শেকল পরা অবস্থায় ঘরের কক্ষে দিন কাটে মোঃ তোতা মিয়ার। তিন বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধ তোতা মিয়া। এর পর থেকে পায়ে শিকল পরানো অবস্থায় বাড়ীর আঙ্গিনায় গাছের সাথে শেকল বাধা অবস্থায় দিন কাটে তাঁর পরিবারের সদস্যদের চোখের আড়াল হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্য এলাকায় যান মোঃ তোতা মিয়া (৫৫)। অকারণেই মানুষকে বিরক্ত করেন, এমন অভিযোগ আসে তাঁর বিরুদ্ধে। এমন অস্বাভাবিক অবস্থা সামাল দিতে দিতে বেসামাল হয়ে পড়েছেন স্ত্রী বেদনা বেগম (৪৫)। বাধ্য হয়ে তাই স্বামীর পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে রেখেছেন তিনি।সারাদিন বাড়ীর পাশে কাঠাল গাছের সাথে শেকল দিয়ে বেধে রাখেন আবার রাতের বেলায় খুঠির সাথে শেকল দিয়ে বেধে রাখেন।
তিন বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধ মোঃ তোতা মিয়া। পায়ে শিকল পরানোর পর থেকে এখন তাঁর দিন কাটে গাছের সাথে শেকল বাধা অবস্থায়। আবার রাতে ঘরের ছোট্ট জীর্ণ একটি কক্ষে। যেটুকু সামর্থ্য ছিল, তা দিয়ে তোতা মিয়াকে ডাক্তার-কবিরাজ দেখিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তবে অর্থের অভাবে ভালো কোনো চিকিৎসকের কাছে তাঁকে নিতে পারেননি তাঁরা।
মোঃ তোতা মিয়া ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর ১ন ওয়ার্ডের এলাকার বাসিন্দা। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক তিনি।সে এলাকায় কৃষি কাজ করতেন ।
তোতা মিয়ার স্ত্রী বেদনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী আগে কিছুটা মাথা খারাপ ছিলো আবার ভাল হয়ে যেতু, সংসারের কাজ করতো, আমাদের কিছু জমি ছিলো তা দিয়ে ধান আবাদ করে সংসার চলতো। এখন আর আমাদের সংসার চলে না। বড় মেয়ে দুটিকে দিয়াছি পোশাক কারখানায় কাজ করতে তা দিয়ে আমাদের সংসার চলে।টাকার অভাবে আমার স্বামীকে ভালোভাবে চিকিৎসা করতে পারতাছি না। অথচ শেষ বয়সে তাঁকে শিকলবন্দী অবস্থায় ঘরে আটকাইয়া রাখতে অয়। এডা যে কত কষ্টের, হেয়া বুঝাইতে পারমু না।’ তিনি বলেন, তিন বছর আগে তোতা মিয়া অসংলগ্ন আচরণ করতে শুরু করেন। বাড়ি থেকে বের ত্রিশাল উপজেলায় ময়লার ড্রেইনে সাত দিন পরে ছিলো,ওইখান থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করি। স্বামীকে সুস্থ করতে ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ করেছেন, কিন্তু সুস্থ করে তুলতে পারেননি।
এখন আমাদের আর সামর্থ্য নেই তাকে চিকিৎসা করবো
মোঃ তোতা মিয়া-বেদনা বেগমের দম্পতির দুই মেয়ে ও দুই ছেলে।দুই মেয়ে পোশাক কারখানায় কাজ করেন।দুই সবার ছোট,তাদের বয়স ৮ থেকে ৫ বছর। বড় মেয়েরা দুজনে পোশাক কারখানায় কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। সব মিলিয়ে বর্তমানে তাঁদের ছয়জনের সংসার।
বেদনা বেগম বলেন, তাদের তেমন কোন সহায়সম্পত্তি নেই তাঁদের। সামান্য জমির ওপর নির্মিত বসতঘর। তাঁর স্বামী প্রতিবন্ধী ভাতা পান, তবে অন্য কোন ভাতা পান না। অভাবের সংসারে স্বামীর চিকিৎসা অনেক পরের বিষয়, ছয়জনের দুবেলা খাবার জোগাড়ই কঠিন হয়ে যায়। এ অবস্থায় তিনি সরকার ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তা চেয়েছেন।
গত রবিবার সকালে মোঃ তোতা মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়,বাড়ীর পাশে একটি কাঠাল গাছের সাথে শেকল বাধা অবস্থায় তোতা মিয়াকে দেখা যায়। তোতা মিয়ার স্ত্রী বেদনা বেগম বলেন, অনেক রাত তাঁর নির্ঘুম কাটে। প্রাকৃতিক কাজকর্ম বিছানাতেই সারতে হয়।
এলাকাবাসীরা জানান, তোতা মিয়া এখন বেশ অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছেন। কারও আর্থিক সহায়তায় উন্নত চিকিৎসা পেলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।