সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি ও শ্রমআইন বাস্তবায়নের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে
বাংলাদেশ স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা থেকে সাম্প্রতিক সাভারের আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে কাউসার হোসেন খান নামের একজন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিসহ সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য মালিক ও সরকারের প্রতি আহবান জানান। ০৪ অক্টোম্বর’২৪ শুক্রবার দিনব্যাপী বাংলাদেশ স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা সুরমা মার্কেটস্থ বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সভাপতি খলিলুর রহমান। স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ছাদেক মিয়া, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক রমজান আলী পটু, সিলেট জেলা স’মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আইয়ুবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, সুনামগঞ্জ সদও উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনির হোসেন, ফেঞ্চুগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের নেতা আনোয়ার হোসেন, নবীগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোহাম্মদ সহ-সাধারণ সম্পাদক সফাত আলী, শ্রীমঙ্গল উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, সিলেট সদর উপজেলা স’মিল স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি হজর আলী, বড়লেখা উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক লাল মিয়া ও কোষাধ্যক্ষ কামাল মিয়া, ওসমানী নগর স’মিল শ্রমিক সংঘের নেতা কয়েছ মিয়া, কমলগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের অন্যতম নেতা আনসার ভান্ডারী, বালাগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের নেতা ফারুক মিয়া, স’মিল শ্রমিকনেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ।
সমাবেশ বক্তারা বলেন বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির বাজারে স’মিল শ্রমিকরা দিশেহারা। চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, পিয়াজ, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম, ঔষুধপত্রসহ নিত্যপণ্যে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দফায় দফায় তেল, গ্যাস, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি ঘটলেও শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আয় বাড়েনি। এমন কি দুই বছরের বেশি সময় আগে স’মিল সেক্টরে সরকার নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তদুপরি প্রতিনিয়ত স’মিল শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স’মিলে কর্মরত শ্রমিকদের শতকরা ৬০ ভাগ দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অঙ্গহানি হয়,কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। কাজ করতে যেয়ে এ সমস্ত দূর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের উপযুক্ত চিকিৎসা যেমন মালিক করে না, তেমননি অঙ্গহানি ও মৃত্যুর জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপুরণও মূলত দেওয়া হয় না। স’মিলের মালিকরা শ্রমআইন, রাষ্ট্রীয় আইনের তোয়াক্কা করেন না। শ্রমআইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র,সার্ভিসবুক প্রদান, দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি, মজুরিসহ সাপ্তাহিক ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি, চিকিৎসা ছুটি, উৎসব ছুটি, অর্জিত ছুটি ইত্যাদির প্রদানের বিধান থাকলেও তা প্রদান করা হয় না। যার কারণে স’মিল শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ পুঞ্জিভ‚ত হচ্ছে।
সভা থেকে স’মিল সেক্টরে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন, অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহার, গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রমবিধি প্রণয়ন, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইন কার্যকর এবং চাল, ডাল তেলসহ নিত্যপণ্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি রোধ এবং স্বল্পমূল্যে স্বর্বাত্মক রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি